• বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৬ অপরাহ্ন

ওমায়ের আহমেদ শাওন এর বিশেষ কলামঃ আমরা ঘৃণা করি

ওমায়ের আহমেদ শাওন / ১২৬ পাঠক
আপডেট শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩

মানব জীবনে যৌন চাহিদা স্বীকৃত। মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণীদেরও প্রকৃতিগত আচরণ অনুযায়ী রয়েছে যৌন কামনা। শুধুমাত্র মানুষের ক্ষেত্রে যৌনাচারের পন্থা নিয়মতান্ত্রিক ও অনুশাসনের মাধ্যমে নিহীত।
নারী-পুরুষের আসক্তি নির্ভর যৌনাচারের মূল উদ্দেশ্য হলো- বংশবৃদ্ধির জন্য (মানব সভ্যতা বিস্তার) সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় ভাবে প্রাধিকার অর্জন।
সভ্য মানব সমাজে বিধান বহির্ভূত সকল প্রকার যৌনকর্ম নিষিদ্ধ বা হারাম। তাই, যারা তাদের প্রয়োজন, সীমালঙ্ঘন কিংবা চারিত্রিক স্বভাবের কারণে sex worker হিসেবে পুরুষের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে মিলিত হয় (যৌনকর্মী হিসেবে পুরুষও আছে; যাদেরকে নারীরা তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে, তবে নিতান্ত এটি কম প্রচলিত) তাদেরকে আমরা অত্যন্ত খারাপ মনে করি। অথচ এদের মতোই অসংখ্য নারী সমাজ ও রাষ্ট্রে নিভৃতে অপকর্ম করে যাচ্ছে। প্রেমের নামে, বন্ধুত্বের নামে, প্রগতিশীলতার নামে, মানবতার নামে তারা ছড়িয়ে আছে। মহামারীর মতো নীরব ঘাতক হিসেবে একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে-। দেহব্যবসায় যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদেরকে আমরা ঘৃণা করি। কিন্তু একই দোষে দোষী মডেল বা অভিনেত্রীর আড়ালে যারা কার্যসিদ্ধ করছে তাদের অপরাধী হিসেবে উপেক্ষা করি।
ফৌনিন-যৌনকর্মী (ফনো-সেক্স-ওয়ার্কার), অর্ধ-উলঙ্গ বা আবেদনময়ী ছবির মডেল, পর্ন ফিল্ম তারকা, চটি লেখক, ওয়েবক্যামে যৌন কর্মক্ষমতা প্রদর্শনকারী, আবেদনময়ী নৃত্যশিল্পী প্রভৃতি সকলেই সুস্থ্য ধারার জীবন যাপনে অভ্যস্ত নয়। তারা প্রত্যেকেই অস্বাভাবিক ও মানসিক বিকারগ্রস্ত। নারীবাদীরা নারীদের অধিকারের কথা বললেও এদের পূণর্বাসন চান না, সেটার কারণে তারা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে নারীবাদীরা ভাইরাল হওয়ার জন্য এসব ভন্ডামি করে। প্রত্যেক মানুষের সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন ধারণের অধিকার রয়েছে। কিন্তু সমাজ, পরিস্থিতি ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকার দরুণ সে মানুষগুলোকে স্বাভাবিক ভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর হয়না। উচ্চশিক্ষি-ভার্সিটি পড়ুয়া, রূপসী মেয়েরাই আজকাল যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছে অধিক হারে। পরিবারের অবাধ্য সন্তানরাই অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হয় বেশী। এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়েই সামিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতীর ফলে এসব অপরাধ বারংবার সংগঠিত হলেও শারিরীক ভাবে আলামত বোঝা সম্ভবপর নয়। ভার্সিটির হোষ্টেলে থাকা মেয়েগুলোও সুযোগ পেলেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পার্টির নামে বেড়িয়ে পড়ছে অবৈধ সঙ্গে। পরিবারের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অনুশাসন ব্যতিত এসব অবাধ যৌনাচার বন্ধ করা অসম্ভব। জীবনের হতাশা, নিরাপত্তহীনতা এবং আত্মহত্যাপ্রবণ নারীরাই এই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে বেশী। যৌন চাহিদা আছে বলেই সেটার নিয়ম-নীতি থাকবে না, পশুদের মতো অবাধ যৌনতায় সকলে নেমে পড়বে এটা ঠিক নয়।
পতিতাবৃত্তিতে সংশ্লিষ্ট নারীরা সহিংসতার সম্মুখীন হন। এবং তারা খুনি-সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, অবৈধ শিল্পপতী-ধর্মবিমুখ ব্যবসায়ী, দুশ্চরিত্র পুরুষদের ভোগ্যপণ্য হয়ে থাকেন।
আমরা ঘৃণা করি, শুধুমাত্র প্রচলিত যৌনকর্মীদের। অথচ আপনার, আমার, আমাদের চোখের সামনেই সুন্দরী ও স্মার্ট নারীরা অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। তারাই আমাদের কারো না কারো কন্যা কিংবা বোন ! তাদের প্রতি আমাদের সামাজিক ও পারিবারীক দায়িত্ববোধ থাকাটা জরুরী।
একজন সুন্দরী নারী যদি কোনভাবে দুশ্চরিত্রা বা যৌনকর্মী হয়ে যায় তাহলে গোটা সমাজকে সে লাঞ্চিত করবে। অসংখ্য সহজ-সরল এবং আবেগী ছেলেদের জীবনকে বিষিয়ে তুলবে। তাই সেসব নারীদের সন্মানজনক ও সুস্থ্য জীবনের প্রতি মনযোগী করানোটা অতীব প্রয়োজন।
পাপীকে ঘৃণা না করার সাথে সাথে যেন আমরা পাপকেও ঘৃণা করা ভুলে গিয়েছি।
আমরা অশ্লীলতাকে মানবিক চাহিদা মনে করে ঘৃণা ও ভালোবাসার তারতম্য ভুলতে বসেছি। মুখে মুখে ঘৃণা করি যৌনকর্মীদের কিন্তু প্রগতিশীলতার আড়ালে যৌনকর্মীদেরই খুঁজি-! যৌনাচারের পন্থা নিয়মতান্ত্রিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে নাহলে পরবর্তী প্রজন্ম নিজেদের বৈধ সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে না, সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত। জন্মনিয়ন্ত্রণ কিংবা জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করে যৌনালীলা করে পরবর্তীতে বিবাহের মাধ্যেমে সন্তান জন্ম নিলেও সে সন্তানের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরোও